ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বিরোধীশুন্য রাজ্যসভায় যেভাবে কৃষি বিল পাশ করিয়ে নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উপর কেন্দ্র সরকার সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তার বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই গোটা দেশ জুড়ে আন্দোলন সংগঠিত হতে শুরু করেছে। এর ফলে গোটা দেশ জুড়ে এবং চাষীদের হাত থেকে কৃষি জমি ধাপে ধাপে বহুজাতিক সংস্থাগুলির অধীনে চলে যাবার আশংকা তৈরী হয়েছে আজ। কিন্তু তার অনেক আগেই এবং কার্যত কয়েকবছর ধরেই বাংলার বিভিন্ন জেলাতে বিশেষ করে আলু চাষে মাথা গলিয়ে দিয়েছে বহুজাতিক সংস্থা পেপসি। রাজ্যের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও বিক্ষিপ্তভাবে গত কয়েকবছর ধরেই পেপসি কোম্পানি আলুর ফলন কিনে নিচ্ছে।
সম্প্রতি কৃষি বিল নিয়ে যখন হৈ চৈ চলছে তখন পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষীরা ঐক্যমত্যভাবেই জানিয়েছেন, এর জন্য দায়ী কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ই। উভয় সরকারই চাষীদের প্রতি দরদ দেখানোর কাজ করলেও কার্যত তাঁরা চাষীদের স্বার্থে সেই অর্থে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। আর তার ফলশ্রুতিতেই আজকে বহুজাতিক সংস্থাগুলি ক্রমশই চাষের জমিতে থাবা বসানোর সুযোগ পেয়ে গেছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বহুজাতিক সংস্থাগুলির অনুপ্রবেশ ঘটলেও পেপসি সহ আরও কয়েকটি সংস্থার কৃষি জমিতে প্রবেশ কয়েক বছর আগেই ঘটে গেছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধিষ্ণু চাষী আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, এখন গেল গেল রব উঠলে হবে না। ধান ছাড়া কেন দুই সরকার অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলির সরকারী সহায়ক মূল্য ঘোষণা করেনি। প্রকৃত অর্থেই তাঁরা যদি চাষীদের স্বার্থরক্ষা করতে চাইতেন তাহলে কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকারের উচিত ছিল অত্যাবশ্যকীয় আলু, পিঁয়াজ পণ্যের সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা। আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, গত বছর তিনি ৩০ বিঘে জমিতে আলু চাষের জন্য পেপসির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। চুক্তি মোতাবেক বিঘা প্রতি ৬ বস্তা আলুর বীজ পেপসি দেয় এবং উৎপাদিত আলু মাঠ থেকে ৪১০ টাকা বস্তা দরে কেনার চুক্তি করে। তিনি জানিয়েছেন, সমগ্র চাষের খরচ তাঁদের ছিল অর্থাৎ কোম্পানির।
আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, এই অবস্থায় তাঁরা ওই বীজ চাষ করে বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছেন ৮০ বস্তা আলু। অথচ যাঁরা নিজেরা আলু চাষ করেছিলেন (জ্যোতি) তাঁরা উৎপাদন করেছেন বিঘা প্রতি ১১০ বস্তা আলু। তিনি জানিয়েছেন, গতবার যখন আলু তোলার সময় হয় সেই সময় জ্যোতি আলুর মাঠের দর ছিল ৬০০ টাকা বস্তা। ফলে তাঁর মত চাষীরা যাঁরা পেপসির সঙ্গে ৪১০ টাকায় চুক্তি করেছিলেন বস্তা প্রতি প্রায় ২০০ টাকা লোকসানের জন্য পেপসিকে বলায় অনেক দরাদরি করার পর তাঁরা বস্তা পিছু আরও ৩০ টাকা বেশি দাম দেয়। মালেক জানিয়েছেন, একদিকে, উৎপাদন কম এবং অন্যদিকে দাম কম। ফলে কার্যত পেপসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চাষ করতে গিয়ে তাঁদের গতবার লোকসানই হয়েছে। কিন্তু তারপরেও চাষীরা চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন – তার কারণ নিশ্চয়তা। যা সরকার এখনও দিতে পারেনি।
0 comments:
Post a comment