
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: আউশগ্রামের অমরপুর অঞ্চলের ভোগাতলায় মাজি পরিবারে দুর্গা ও কালী একইসঙ্গে একই আসনে পূজিতা হন। ৭৫ বছর ধরে এই রেওয়াজ চলে আসছে। মাজি পরিবারের বর্তমান সদস্য জগন্নাথ মাজি জানিয়েছেন, তিনি জানিয়েছেন, বারোমাস পরিবারের সদস্যরা এই দুই দেবী মূর্তির নিত্যসেবা করলেও দূর্গাপুজোর সময় আলাদা করে মন্দিরের বাইরে দুর্গা মূর্তি নিয়ে এসে পূজো করা হয়। বারোমাস পরিবারের সদস্যরা নিত্যপুজো করলেও দুর্গাপুজোর এই কদিন বাইরে থেকে ব্রাহ্মণ নিয়ে এসে পুজো করানো হয়। প্রায় ৭৫ বছর ধরে এই রেওয়াজ চলে আসছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের অমরপুর অঞ্চলের ভোগাতলা গ্রামে।
তিনি জানিয়েছেন, ইঁদুরের গর্ত থেকে মাটি তুলে এনে মাজিবাড়ির দূর্গাপুজোয় ঘট বসানো হয়। ঘটের ওপর দেওয়া হয় পাঁচরকমের কলাই। চতুর্থীর দিন শুশুনি, কলমি, লালখাঁড়া, লাউ, কুমড়ো, পালং ও পুনকো এই সাত ধরনের শাক দিয়ে বিশেষ ভোগ দেওয়া হয়। মাজিবাড়ির দেবীর কাছে অনেকে মানত করেন। মানত পুর্ণ হলে পুজো দেন।
জগন্নাথবাবু জানিয়েছেন, পুজোয় যে সমস্ত কাপড় ও গহনা ভক্তরা দেন সেসব তাঁরা নিজেরা ব্যবহার করেন না। গ্রামের গরীব মেয়েদের বিয়ের সময় সেসব দান করা হয়। পাশাপাশি এই পুজো ঘিরে সমগ্র আনন্দে মেতে ওঠেন এলাকাবাসী। তিনি জানিয়েছেন, এই পুজোর শুরুর পিছনে রয়েছে এক কাহিনী। কাঁকসা জঙ্গলমহলের শ্যামারুপাদেবীর পুজোয় নবমীর বলিদানের জন্য চালকুমড়ো যেত ভোগাতলার মাজিবাড়ি থেকে। প্রায় ৭৫ বছর আগে পূর্বপুরুষ সুধীর মাঝি নবমীর দিন নিয়মমাফিক চালকুমড়ো নিয়ে গিয়েছিলেন শ্যামারুপাদেবীর মন্দিরে। প্রথা ছিল ভোগাতলার মাঝিবাড়ির চালকুমড়ো আগে বলি দেওয়ার পর শ্যামারুপা দেবীর পুজোয় অন্যান্যদের বলিদান হবে। কিন্তু ওই বছর সুধীরবাবুর পৌঁছাতে কিছুটা দেরী হয়ে যাওয়ায় তার আগেই বলিদান পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাতে প্রচন্ড অপমানিত হন সুধীরবাবু। মানসিকভাবে খুব কষ্টও পেয়েছিলেন। তারপর সেই চালকুমড়ো নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে একখন্ড পাথরের সামনে চালকুমড়োটি দেবীর উদ্দেশে বলিদান দিয়েছিলেন। সেই বছর থেকেই কার্যত মাজি পরিবারে শুরু হয়ে যায় দূর্গাপুজো। তবে ভোগাতলার মাজি পরিবারের পুজোয় শারোদ উৎসবের সময় কেবলমাত্র নতুন মুর্তি গড়ে মন্দিরের বাইরে ব্রাহ্মণ দিয়ে পুজো করা হয়। মন্দিরের ভিতরে কালী ও দূর্গা পাশাপাশি রেখে পুজো করা হয়। এই জোড়াদেবীর প্রতিমা প্রতি তিনবছর অন্তর বিসর্জন করা হয়।
0 comments:
Post a comment