
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ নির্দিষ্ট সূত্রের ভিত্তিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড় থানা এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে জঙ্গলঘেরা একটি মাঠ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া এই চারজনকে। তারা কলকাতা, উত্তর ২৪পরগনা ও বীরভূমের বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়া ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু মাওবাদী পত্র পত্রিকা। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, ধৃতরা উক্ত থানার মাকলি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার কানজি মাকলি ফুটবল মাঠে অবস্থান করছিলো। এত রাতে ঠিক কি করছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এও দেখা হচ্ছে যে এদের সঙ্গে মাওবাদী যোগসূত্র রয়েছে কিনা। ধৃতদের মধ্যে সব্যসাচী গোস্বামী ও সঞ্জীব মজুমদার ব্যারাকপুর এলাকার বাসিন্দা, অর্কদ্বীপ গোস্বামী কলকাতার পর্ণশ্রী এবং টিপু সুলতান বীরভূমের শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা।
এদিকে সরকার বিরোধী মন্তব্য করতে থাকায় মাওবাদী প্রচারক সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া কলকাতার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা অর্কদীপ গোস্বামী ওরফে বিজয়কে ২০১৬ সালেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল। কার্যত ২০১৬ সালেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এমবিবিএসের প্রথম ও দ্বিতীয় পার্টের পরীক্ষায় পাশ করলেও আর পরীক্ষা তিনি দেননি। এমবিবিএস পরীক্ষা তাঁর অসম্পূর্ণই রয়ে যায়। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে পুলিশ যে ৪জনকে মাওবাদী প্রচারক হিসাবে গ্রেপ্তার করেছে তার মধ্যে রয়েছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের এমবিবিএসের (অসম্পূর্ণ) এই দ্বিতীয় বর্ষ পাশ করা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র অর্কদীপ গোস্বামী। রীতিমত ভাল ছাত্র হিসাবেই তাঁর পরিচিতি রয়েছে কলেজ হোষ্টেলে। তাকে মাওবাদী প্রচারক হিসাবে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমত চর্চা শুরু হয়েছে কলেজ জুড়ে।
যদিও প্রকাশ্যে এব্যাপারে কেউই মুখ খুলতে রাজী হননি। মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালেই অর্কদীপের অ্যাণ্টি গভর্ণমেণ্ট মানষিকতা এবং সোস্যাল মিডিয়ায় তার বিভিন্ন পোষ্টকে কেন্দ্র করে অশান্তির পরিবেশ তৈরী হয়। তাকে সাবধান করেও ফল না মেলায় তাকে কলেজ হোষ্টেল ছেড়ে চলে যাবার জন্য বলেন ছাত্রছাত্রীরা। এরপরই ২০১৬ সালে সরাসরি কলেজ হোষ্টেল ছেড়ে চলে যান।এরপর আর তাকে কেউ দেখেননি।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সেই সময় অর্কদীপ ওরফে বিজয় যে ফেসবুক এ্যাকাউণ্ট খোলে সেখানে তার এ্যাকাউণ্টের নাম দেয়'বিদ্রোহী মুক্তিকামী ধর্মহীন অর্কদীপ'। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ অর্কদীপ সহ আরও ৪জনকে মাওবাদী কার্যকলাপ প্রচার করার দায়ে গ্রেপ্তার করেছে বলে পুলিশের দাবী। তাদের কাছ থেকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু কাগজপত্রও পাওয়া গেছে বলে দাবী পুলিশের।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত ক্লাস না করলেও পরীক্ষার সময় হাজির হতেন তিনি। পরীক্ষায় রীতিমত ভাল ফলও করতেন। কলেজ হোষ্টেলের একটি ঘরে তিনি একাই থাকতেন। জানা গেছে, মাঝে মাঝেই তিনি উধাও হয়ে যেতেন। অর্কদীপ মাঝে মাঝেই বীরভূমের বোলপুর চলে যেতেন। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ সূত্রে খবর,অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা যেমন হোষ্টেলে মিলেমিশে থাকত অর্কদীপ কিন্তু সেভাবে থাকত না।
উল্লেখ্য, রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে ইদনিং কালে দাবী করা হচ্ছিল যে, জঙ্গলে আবার সক্রিয় হচ্ছে মাওবাদীরা। এই গ্রেপ্তার সেই দাবীকে পুষ্ট করছে কিনা সেটাই এখন দেখার।
0 comments:
Post a comment