
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমানঃ সুচিকিৎসার লক্ষ্যে রাজ্যে চিকিৎসকের অভাব মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলির আসন সংখ্যা একলাফে অনেকটাই বাড়িয়েছেন, এমনকি রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নয়নের জন্য রীতিমত ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে সরকারী হাসপাতালগুলিতে, গড়ে তোলা হচ্ছে জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। সেই সময় এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ গ্রহন করল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কেবলমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকেই রাজ্যে প্রতিবছর আপাতত ১০০ জন করে চিকিৎসক তৈরীর কাজ শুরু করে দিল জেলা প্রশাসন। যা গোটা রাজ্যের বুকে এই প্রথম।
ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবক মহল মনে করছেন, মেডিকেল পরীক্ষায় এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা তেমনভাবে সুবিধা করতে না পারার মূল কারণ তাদের সঠিক কোচিং এর অভাব। যেভাবে অন্য রাজ্যগুলি ছাত্রছাত্রীরা মেডিকেলের ফলাফল করেন, সেখানে এই রাজ্যের ছেলেমেয়েরাও সর্বভারতীয় স্তরের সঠিক কোচিং পেলে তারাও ভাল ফল করতে সক্ষম। আর তাই, রাজ্যে চিকিৎসকের অভাব পূরণ করতে মেডিকেলের জন্য ছাত্রছাত্রীদের উন্নতমানের কোচিং দেবার উদ্যোগ নিলেন খোদ জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব। শনিবার থেকে বর্ধমানের কৃষ্ণপুর হাইস্কুলে শুরু হল ১০০ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে এই কোচিং।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগ্রহীদের মধ্যে প্রায় ৪৫০জন আবেদন করেছিল এই বিশেষ কোচিং-এর জন্য। যদিও পরবর্তী সময়ে অনেকে অভিভাবকই অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ঠিক সময়ে এই খবর পাননি। তবে যাইহোক, আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে ১০০ জনকে বাছাই করে শনিবার থেকেই শুরু হয়ে গেল 'স্বপ্ন উড়ান' নামে সপ্তাহে শনি ও রবিবার ৮ ঘণ্টা করে এই প্রশিক্ষণ।
জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, দিল্লীর ক্রিয়েটিভ এ ডিফারেন্স এডুকেশন বা ক্যাড নামক সংস্থার প্রশিক্ষকরা এই প্রশিক্ষণ দেবেন। থাকছে সিডি এবং অডিও ভিডিও মাধ্যম ছাড়াও সরাসরি দিল্লীর এই্ সংস্থার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি, বায়োলজি প্রভৃতি বিষয়ের জন্য মোট ৬জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। গোটা প্রশিক্ষণ পর্বটাই ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া হবে। প্রতিটি বিষয়ের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি মাসে বা ২-৩ মাস অন্তর নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। দিল্লী থেকে বিশেষ প্রশিক্ষকরা নিয়মিত তদারকি করবেন ছাত্রছাত্রীদের। কিছুদিন অন্তর তাঁরাও আসবেন এই
শিবিরে।
কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনার জানিয়েছেন, আগামী বছর এই ছাত্রছাত্রীরা মেডিকেলে বসবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই যেহেতু ২ মাস পেছিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হল, তাই বিভিন্ন ছুটির দিনেও সেই ক্ষতি পূরণের জন্য আলাদা ক্লাস নেবেন প্রশিক্ষকরা।
জেলা সর্বশিক্ষা প্রকল্পের আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী জানিয়েছেন, জেলাশাসকের কথামতই এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে স্বপ্ন উড়ান। এ উড়ান ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার। স্বপ্ন, মেধা থাকলেও অনেকের সেই উড়ান থমকে যায় অর্থের অভাবে, সঠিক দিকনির্দেশের অভাবে। সেইসব স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করতেই এগিয়ে এসেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। একশো পড়ুয়াকে মেডিকেলের সর্বভারতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য প্রশাসনের।
শনিবার কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের এই প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিখিল নির্মল, প্রবীর চট্টোপাধ্যায় (শিক্ষা) বাসব বন্দোপাধ্যায় ( জেলা পরিষদ) সহ বিভিন্ন আধিকারিকরাও।
0 comments:
Post a comment