
পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ সতীর ৫১পীঠের ২৮তম পীঠ হল কঙ্কালিতলা। বীরভূম জেলার বোলপুর থানার অন্তর্গত বেঙ্গটিয়া গ্রামের একটি শ্মশানের ধারে অবস্থিত এই পীঠস্থান। কোপাই নদীর তীরে জঙ্গল ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এই সতীপীঠ পর্যটনের এক আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে পরিচিত। জানা যায়, সতীর কাঁকাল খন্ড পরেছিল এই কঙ্কালিতলায়। কোপাই নদীর ধারে ঘেঁসে আছে একটি কুন্ড। ওই কুন্ডের জলে আছে দেবীর কাঁকাল। কুন্ডের জলে ডুবিয়ে রাখা একটা শিলাকেই দেবীর পতিত অঙ্গ বলা মনে করা হয়। এখানে দেবীর নাম দেবগর্ভা। প্রচলিত আছে, প্রবল গ্ৰীষ্মেও এই কুন্ডের জল নাকি গরম হয় না। একসময় খোলা বেদীতেই দেবীর পূজো হত। শোনা যায়, ওই বেদীর নীচে ১০৮ টা নরমুন্ড পোঁতা আছে। বর্তমানে অবশ্য মন্দির তৈরী হয়েছে। এখানে দেবীর কোনো মূর্তি নাই, দেবীকে পটচিত্রে কালীরূপেই পূজো করা হয়।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে কঙ্কালিতলায় বিশাল উৎসব শুরু হয় । ওইদিন দেবীর বিশেষ পূজো হয়, ভক্তরা তাঁদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে প্রচুর বলিও চড়ান দেবীর উদ্দেশ্যে। সংক্রান্তির আগের দিন শুরু হয় মেলা। মেলা চলে ৫দিন ধরে। চৈত্র সংক্রান্তির দিন ভক্তরা কুন্ডতে স্নান করে পুণ্য অর্জন করেন এবং কুন্ডর পাঁক পরিস্কার করেন। সেইদিনই জলের মধ্যে থাকা পঞ্চ শিব তুলে এনে রাখা হয় পাশের কাঞ্চীশ্বর শিব মন্দিরে। পয়লা বৈশাখের দিন পুনরায় ওই পঞ্চ শিব কুন্ডের জলে রেখে আসা হয়। এই কাঞ্চীশ্বর মন্দিরে অনেকে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন বলে কথিত আছে।
উল্লেখ্য, কঙ্কালিতলা একটা ভালো পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ এই নদী,জঙ্গল পরিবেষ্টিত স্থানে পিকনিক করতে সপরিবারে আসেন। এছারাও শান্তিনিকেতনে পর্যটকরা ঘুরতে এলেও তারা কঙ্কালিতলা দর্শন করতে আসেন। এখানে কোনো ধর্মশালা বা হোটেল না থাকায় পর্যটকদের রাত্রিবাসের সুযোগ নেই। ফলে সতীপীঠ হওয়া সত্বেও কঙ্কালিতলা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে তেমন পরিচিতি পায়নি। বছরের শুরুতে বীরভূম সফরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কঙ্কালিতলায় এসে মা কে শাড়ি দিয়ে পূজো দেন। তারপর তিনি জানান, মন্দির এবং মন্দির সংলগ্ন কুন্ড ও এই এলাকাকে সাজিয়ে তোলা হবে। ধর্মশালাও করা হবে। সব মিলিয়ে এই মন্দিরকে ভবিষ্যতে পর্যটকমুখী করার ব্যাবস্থা করা হবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। সেই অনুযায়ী এখন সেখানে কাজ শুরু হয়েছে। মূল মন্দিরের সংস্কারের কাজও চলছে। সাথে সাথে কুঠিবাড়িও নির্মান হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এই কঙ্কালিতলা রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
0 comments:
Post a comment