ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমানঃ দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রায় দুমাস ধরে নেশাচ্ছন্ন করে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে ছাত্রীটির নগ্নছবি তুলে সোস্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করার অভিযোগে অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হল নির্যাতিতার পরিবার। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান শহরে। নির্যাতিতা ছাত্রীটির পরিবার সুত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় একবছর আগে তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে চলে যায় একই এলাকার বাসিন্দা সেখ রফিকুল ওরফে ইন্দ্রনীল মুখার্জ্জী ওরফে ইন্দ্রনীল মল্লিক নামে এক যুবক। ছাত্রীটিকে বর্ধমান থেকে নিয়ে গিয়ে তোলা হয় বীরভূমের সাঁইথিয়ার একটি গ্রামে রফিকুলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে তাকে প্রায় দুমাস রাখা হয়। ছাত্রীটির অভিযোগ, সেখানে তাকে মাদক জাতিও কিছুর মাধ্যমে সারাক্ষন নেশাচ্ছন্ন করে রাখা হত। এই অবস্থায় তার নগ্ন ভিডিও ছবি তুলে তা সোস্যাল মিডিয়াতেও পোষ্ট করে রফিকুল।
ছাত্রীটি জানিয়েছে, কোনোভাবে একটি ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করে সমস্ত বিষয় জানানোর পর বর্ধমান থানার পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কিন্তু ছাত্রীটি নাবালিকা হওয়ায় তাকে সরকারি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে ছাত্রীটিকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসার পর থেকেই ফের নানাভাবে হুমকি, অত্যাচার চালাতে শুরু করেছে ওই অভিযুক্ত যুবক।

নির্যাতিতা ছাত্রীটি জানিয়েছেন, যখন পরিচয় হয়েছিল সেই সময় ওই যুবক তার নাম ইন্দ্রনীল মুখার্জ্জী বলে জানিয়েছিল। এমনকি সে একটি কোম্পানীতে কাজ করে বলেও জানায়। পরে ওই যুবক নিজেকে বর্ধমানের বেশ কিছু পুলিশ অফিসারের ঘনিষ্ঠ বলেও দাবি করে ছাত্রীটির কাছে। ছাত্রীটির অভিযোগ, গত বছর ১৮ এপ্রিল বেড়াতে নিয়ে যাবার নাম করে রফিকুল তাকে বীরভূমে নিয়ে পালিয়ে যায়।
বুধবার বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে ওই ছাত্রীর মা অভিযোগ করেছেন, তাঁর একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। আতঙ্কে তাকেও স্কুল পাঠাতে পারছেন না। এমনকি মেয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটার পর মেয়ের পড়াশোনাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনার বিষয়ে বর্ধমান সদর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তিনি জেলা পুলিশ সুপারের পাশাপাশি জেলাশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার আবেদন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই ভারতীয় মানব অধিকার সংরক্ষণ সংঘের রাজ্য সভানেত্রী সংগীতা চক্রবর্তী এই ছাত্রীর ওপর নির্যাতনের বিষয় সম্পর্কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার আর্জি জানিয়েছেন। সংগীতাদেবী জানিয়েছেন, এই ঘটনার খবর পেয়েই তাঁরা সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত যুবকের কাছ থেকে তার মোবাইল ফোনে থাকা ওই নাবালিকার বিভিন্ন নগ্ন ছবিগুলি মুছে দেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন তার কাছে একটি ল্যাপটপ রয়েছে এবং সেখানেই ওই সমস্ত ছবি
রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে তাঁরা এই ঘটনায় দোষীকে গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তি দেবার দাবী জানিয়েছেন।
এব্যাপারে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি সম্পর্কে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিককে প্রয়োজনীয় তদন্ত করে উপযুক্ত আইনী ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায় জানিয়েছেন, পুলিশ অভিযোগ নেয়নি এব্যাপারটি ঠিক নয়। একজন নাবালিকার ওপর এই ধরণের নির্যাতনের ঘটনা মারাত্মক অপরাধ। তিনি জানিয়েছেন, নির্যাতিতারা বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেই পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
0 comments:
Post a comment