
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মাধবডিহি : ডাইন অপবাদে একই পরিবারের বৃদ্ধ দুই ভাই বোনকে পিটিয়ে খুন করার ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল পূর্ব বর্ধমান জেলার মাধবডিহিতে। নিহতদের নাম মঙ্গলা মাণ্ডি (৬০) এবং বাঁকু ওরফে মাকু বাস্কে (৬৫)। মৃত দুজনের বাড়ি মাধবডিহি থানার আড়ুই গ্রাম পঞ্চায়েতের নেওড় গ্রামের দিঘীরপাড় আদিবাসী পাড়ায়। খুন করার পর দেহ দু’টিকে প্রথমে ঘটনাস্থলের কাছেই পুঁতে দিয়েছিল অভিযুক্তরা। রাতেই এই ঘটনার খবর পেয়ে রায়না -২ এর বিডিও দীপ্যময় মজুমদার গ্রামে গেলে তাঁকে ধারালো অস্ত্র সহ তীর ধনুক নিয়ে তাড়া করা হয়। কার্যত প্রাণ বাঁচাতে বিডিও পালিয়ে আসেন। এরপর তিনি রায়না থানায় খবর দেন। কিন্তু রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিশাল পুলিশ বাহিনী ওই গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। গ্রামবাসীরা গোটা গ্রাম ঘিরে রাখে। পরে বর্ধমান থেকে আরও পুলিশ বাহিনী নিয়ে যাওয়া হয়।
মৃতা মাকু বাস্কের সৎ ছেলে শিবু বাস্কে এই ঘটনায় ১৮ জনের নামে মাধবডিহি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর নেই।
এদিকে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাস্থল থেকে চার কিলোমিটার দূরে দামোদরের চরে মৃতদেহ দু’টিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটের মুখে এই ঘটনার জেরে অস্বস্তির মুখে পড়েছে জেলা তৃণমূল। এই ঘটনা নিয়ে জেলা তৃণমূলের নেতারা কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় ৮০ ঘর আদিবাসী পরিবারের বসবাস। মৃতদের ভাইপো বিশু মান্ডির স্ত্রী রেখাদেবী গত ৬ মাস ধরে শারীরীক সমস্যায় ভুগছেন। তাঁকে নিয়ে একটি ট্রাক্টরে করে পরিজন ও পড়শিরা জামালপুরের রুক্মিনিতলার এক ওঝার কাছে গিয়েছিল। জানা গেছে গত তিনদিন ধরেই এই ওঝার কাছে রেখাদেবীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সঙ্গে মঙ্গলা মাণ্ডি আর মাকু বাস্কেও থাকতো। জানা যায়, ওই ওঝা নাকি মাকু বাস্কে ও মঙ্গলা মাণ্ডিকে ডাইন অপবাদ দেয়। ওই দু’জনের জন্যেই রেখাদেবীর শরীর ভাল যাচ্ছে না বলে ওঝা জানায়। এরপর সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ গ্রামে ফিরে আসেন সবাই। যে যার বাড়ি চলে যান। মৃতদের আরেক ভাইপো গুরুপদ মান্ডির দাবি, 'গ্রামে বিষয়টি ছড়িয়ে যাওয়ার পরে কয়েকজন মিলে কাকা ও পিসিকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর ফাঁকা মাঠে ৪০-৫০ জন মিলে পিটিয়ে তাঁদেরকে খুন করা হয়। আধমরা অবস্থায় উভয়ের মুখে ঢেলে দেওয়া হয় কীটনাশক। আমরা কয়েকজন প্রতিবাদ করলে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে আটকে রাখা হয়েছিল।পরে মৃতদেহ দুটি দামোদরের চড়ে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়েও দেওয়া হয়।'
অপরদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জেলা সম্পাদক অনাবিল সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এই ধরণের বর্বরোচিত ও পৈশাচিক ঘটনাকে কখনই মেনে নেওয়া যায় না। কোনো ব্যক্তির রোগ হলে তাঁর সঠিক চিকিৎসা হওয়া দরকার। রোগের জন্য কাউকে দায়ী করা এবং এভাবে পিটিয়ে খুন করার ঘটনা রোধে প্রশাসনকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময়ই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই ডাইন অপবাদ দিয়ে ঘরছাড়া বা পিটিয়ে মারার মত ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের উচিত সঠিক কারণ খুঁজে বার করা এবং একইসঙ্গে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরণের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পান।
বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, এই ধরণের ঘটনা কখনই মেনে নেওয়া যায়না। তিনি জানিয়েছেন, আইন আইনের পথেই চলবে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
0 comments:
Post a comment