
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রাজ্যের ৭টি জেলার সঙ্গে গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় সোমবারের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে প্রশাসনকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সোমবার সকাল থেকেই কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক বর্ধমান জেলার সর্বত্রই পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাই অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল । তবু পুলিশের উপস্থিতিতেই এদিনও বিগত দিনগুলোর মতই শাসকদের শাসানি, তাণ্ডব, মারধোরের পাশাপাশি বোমাবাজির ঘটনাও ঘটল জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা এদিন ফের সরব হয়েছেন শাসকদলের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে।
এদিন ভাতারে মনোনয়ন ঘিরে সকাল থেকেই বিডিও অফিসের বাইরে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা জমায়েত করে রেখেছিল। সিপিএমের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করতে এলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। যদিও এদিন বাধার মুখে পড়েও সিপিএমের কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা করেন। ভাতারে উত্তেজনা চরম আকার নেয় দুপুর আড়াইটে নাগাদ। জানা গিয়েছে সিপিএমের ২০ – ২২ জন কর্মী ও প্রার্থীরা মিলে তৃণমূলের বাধা অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন দাখিল করতে ব্লক অফিসের ভিতরে ঢুকে পড়েন। তারপর তাদের মধ্যে চারজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেন। কিন্তু তৃণমূল কর্মীদের ভয়ে সিপিএমের কর্মী ও প্রার্থীরা অফিস থেকে বের হতে পারেননি। পুলিশের পরামর্শে তারা সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত ব্লক অফিসের ভেতরেই থেকে যান। তারপর পুলিশ ওই সিপিএম প্রার্থীদের নিরাপদে তাদের কিছুটা এগিয়ে দিতে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভাতার বাজারে কামারপাড়া মোড়ে সিপিএম প্রার্থীদের সঙ্গে করে যখন পুলিশ এগিয়ে দিতে যাচ্ছিল তখনই তৃণমূলের লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। বোমার স্প্লিনটার লাগে দুজন সিভিক ভল্ন্টিয়ার্স, একজন ভিলেজ পুলিশ ও একজন এ এস আইয়ের শরীরে। তারা আহত হন। বোমাবাজির মুখে পড়ে পুলিশ পিছিয়ে আসে। দোকানদাররা দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে দেন। পুলিশ সন্মিলিতভাবে তৃণমূলের উত্তেজিত কর্মীদের তাড়া করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অভিযোগ ঘটনার সময় দুরাউন্ড গুলিও চলে। যদিও পুলিশ গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেনি। আহত পুলিশ কর্মীদের স্থানীয় এক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত হোমগার্ডের নাম শেখ আসলাম ও সিভিক ভলেন্টিয়ারের নাম শেখ ফিরোজ।
অন্যদিকে, এরপরই তৃণমূল সমর্থকরা হামলা চালায় সিপিএমের ভাতার ১নং এরিয়া কমিটির কার্যালয়ে। সিপিএম দলীয় অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর করার পাশাপাশি অফিসের ভিতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। এই ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হন বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী। তবে সন্ধ্যে পর্যন্ত এই এঘটনায় গ্রেপ্তারের কোন খবর পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে, সোমবার সকাল থেকেই জায়গায় জায়গায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মনোনয়নপত্র জমা
দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশের সামনেই চলল বিরোধীদের মারধোর। কেড়ে নেওয়া হল মনোনয়নের কাগজপত্রও। তাড়া করে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হল বিরোধী প্রার্থীদের। সোমবার সকাল থেকেই কমবেশী এই একই চিত্র গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েই ঘটল। এদিন সকাল থেকেই বর্ধমান শহরের বর্ধমান সদর উত্তর ও দক্ষিণ মহকুমা অফিসকে রীতিমত চারিদিক দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। গত ৯ এপ্রিল যেভাবে শাসকদলের নেতারা মনোনয়নকেন্দ্রের
মধ্যে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছিল এদিন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হলেও ২০০ মিটারের বাইরে ছিল শাসকদলের ব্যাপক শাসানি। মনোনয়ন কেন্দ্রের মূল প্রবেশ পথেই ছিল কড়া নজরদারী। ছিলেন শাসকদলের বাঘা বাঘা নেতারাও। প্রশাসনিক কাজের অছিলায় শাসকদলের নেতারা একবার করে ঘুরে দেখে গেছেন মনোনয়ন কেন্দ্রের ছবিটা।
এদিন সকাল থেকেই বর্ধমান শহরের কার্জনগেটে মূল প্রবেশ পথে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে এলেই তাঁদের টানাহ্যাঁচড়া করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিরঙ্কুশ জয় তথা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করতে এদিন শেষ কামড় দিতে প্রতিটি ব্লক অফিসকেই সকাল থেকে ঘিরে রেখেছিল শাসকদলের সমর্থকরা। এমনকি খোদ নিজেদের দলীয় প্রার্থীদেরও মনোনয়ন দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মন্তেশ্বরে। খোদ রাজ্য নেতা তথা দলীয় পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে এদিন মন্তেশ্বরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক পুরনো নেতৃত্বরা। কিন্তু নব্য তৃণমূলীদের দাপটে তাঁরা মনোনয়নপত্র দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী অভিযোগ করেছেন, এদিন বড়শুল, জামালপুর, মেমারী, গলসী, পূর্বস্থলী সহ একাধিক জায়গায় বিজেপি প্রার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকজন বিজেপি প্রার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। জামালপুরে সন্ধ্যে পর্যন্ত দুজন বিজেপি প্রার্থীকে তুলে নিয়ে যাবার পর থেকে কোনো হদিশ মেলেনি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
অন্যদিকে, এদিন জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের আসনে এদিন বিজেপি ৯টিতে, কংগ্রেস ২টিতে এবং অন্যান্যরা ১টি আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এদিন তৃণমূল কংগ্রেস ৯টিতে, বিজেপি১৭টিতে, সিপিএম ৭টিতে, কংগ্রেস ১টিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে এদিন তৃণমল কংগ্রেস ৩৭টিতে, বিজেপি ৫৫টিতে,সিপিএম ২৮টিতে এবং কংগ্রেস ৬টিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।
ফলে মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ দিন পর্যন্ত গোটা জেলায় মোট প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়ালো - মোট ৫৮টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৬৬টি, বিজেপি ৫১টিতে,সিপিআই ২, সিপিএম ১৮টি,ফরওয়ার্ড ব্লক ৪টি, কংগ্রেস ১১টি, নির্দল ৪টিতে এবং অন্যান্যরা ৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন।
পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৭৬৫টি, বিজেপি ২২৩টিতে, সিপিএম ২০৩টি,ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি, কংগ্রেস ২২টি, নির্দল ২২টিতে এবং অন্যান্যরা ২টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন।
গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩২৩৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৪০০৩টি, বিজেপি ৯৯৯টিতে,সিপিআই ২, সিপিএম ৯৬০টি,ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি, আরএসপি ১টিতে, কংগ্রেস ৭১টি, নির্দল ১৬০টিতে এবং অন্যান্যরা ২০টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন।
0 comments:
Post a comment