
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ বেসরকারি নার্সিংহোমের ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বেনজির রায়। অভিযুক্ত নার্সিংহোমকে জরিমানা করা হল ১৭লক্ষ ২৮হাজার টাকা। এছাড়াও আইনি খরচার জন্য আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই নার্সিংহোমকে। আগামী একমাসের মধ্যে জরিমানার পুরো টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের পক্ষ থেকে। বুধবার জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিনজনের বিচারক মণ্ডলী এই রায় শোনান। ঘটনায় খুশি অভিযোগকারী মিত্রনাথবাবু।
জানা গিয়েছে, গঙ্গারামপুর থানার ফুলবাড়ি এলাকার মিত্রনাথ রায় চৌধুরীর স্ত্রী হিরারায় চৌধুরী বছর খানেক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। গত ২৩ মার্চ ২০১৭ সালে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে প্রথমে স্ত্রীকে ভরতি করান। সেখান থেকে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে স্ত্রীকে ভরতি করান। ৩০ মার্চ রোগীকে চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়। বাড়ি নিয়ে আসার পর ফের পেটে ব্যথা শুরু হলে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালের এক চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন মিত্রনাথবাবু।
অভিযোগ, তিনি সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে অপারেশন করার কথা বলেন। এর জন্য রোগীকে গঙ্গারামপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভরতি করাতে বলেন অভিযুক্ত চিকিৎসক। ভরতি পর একাধিক রিপোর্টও করতে বলা হয় রোগীকে। ৩ এপ্রিল ২০১৭ রোগীর অস্ত্রোপচারের তারিখ ঠিক হয়। সেই মত রোগীর পরিবারে পক্ষ থেকে বন্ড পেপারে সই করিয়ে নেওয়া হয়। সেদিন অস্ত্রোপচারের পর পরিবারকে জানানো হয় রোগী ভাল আছে। সেই মত তারা বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু ওই দিন রাতেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ মিত্রনাথবাবুকে ফোন করে জানান তার স্ত্রীর অবস্থা ভাল না তাড়াতাড়ি আসতে হবে। খবর পাওয়া মাত্র রাতেই নার্সিংহোমে ছুটে যান তিনি। কিন্তু নার্সিংহোমে গিয়ে শোনেন তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে মালদা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গেলে জানতে পারেন চিকিৎসক হিরারায়দেবীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া ব্যয় স্বাপেক্ষ হওয়ায় মালদার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে স্ত্রীকে ভরতি করান মিত্রনাথবাবু। ৪এপ্রিল ভরতি করানোর পর ৬এপ্রিল সকালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান হিরারায়দেবী।
এরপরই অভিযুক্ত নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গঙ্গারামপুর থানায় একাধিকবার লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি বলে মিত্ৰনাথ বাবুর অভিযোগ। অবশেষে ৫মে ২০১৭ সালে জেলা পুলিশ সুপার, জেলাশাসক ও ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে সরাসরি অভিযোগ জানান মিত্রনাথ রায় চৌধুরী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুরো বিষয় খতিয়ে দেখে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। এরপর এদিন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিনজন বিচারকমণ্ডলী শ্যামলেন্দু ঘোষাল, সুভাষ চন্দ্র চক্রবর্তী, স্বপ্না সাহা অভিযোগকারীর পক্ষে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, চিকিৎসায় গাফিলতির জন্যই মৃত্যু হয়েছে ওই রোগীর। আর এর পেছনে নার্সিংহোম ও চিকিৎসক জড়িত রয়েছে। সব কিছু বিবেচনা করে বেসরকারি ওই নার্সিংহোমকে ১৭লক্ষ ২৮হাজার টাকা জরিমানা করে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। পাশাপাশি এতদিন পর্যন্ত আইনি লড়াই এর খরচ বাবদ আরও ২০হাজার টাকা জরিমানা করেন। আগামী এক মাসের মধ্যে জরিমানার পুরো টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সভাপতি শ্যামলেন্দু ঘোষাল জানান, সব কিছু খতিয়ে দেখে এমন রায় দেওয়া হয়েছে। এর আগে এমন রায় জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
0 comments:
Post a comment